গত এক দশকে দেশের আমের মৌসুম দীর্ঘ হয়েছে। গ্রীষ্ম-বর্ষা ছাড়িয়ে এখন শীত পর্যন্ত বাজারে দেখা যায় দেশের চাষ করা আম। এ বছর শরৎ-হেমন্তেও পর্যাপ্ত আম পাওয়া গেছে। ফল বিক্রেতারা জানিয়েছেন, এই আম আমদানি করা নয়, সম্পূর্ণ দেশীয় উৎপাদন।
অমৌসুমি এই আম বাজারে ‘কাটিমন’ নামে পরিচিত। প্রায় আট বছর আগে ২০১৭ সালে চাঁপাইনবাবগঞ্জের শিবগঞ্জে ধাইনগর গ্রামের এনামুল হকের বাগানে প্রথম এই আম দেখেন লেখক। তখন কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের একটি প্রকল্পের মাধ্যমে প্রদর্শনী বাগানটি তৈরি হয়েছিল।
এ বাগানে ভিয়েতনাম থেকে সংগ্রহ করা সায়ন কলমের সঙ্গে ১০–১২ বছর বয়সী ক্ষীরশাপাতি ও লক্ষ্মণভোগ জাতের আমগাছকে ভিনিয়ার গ্রাফটিং পদ্ধতিতে (‘টপ ওয়ার্কিং’) মিলিয়ে সফলভাবে উৎপাদন করা হয়। পরের বছর থেকেই ফলন আসে এবং পরবর্তীতে বিপুল পরিমাণে ফলন শুরু হয়।
বর্তমানে নওগাঁ জেলার সাপাহার উপজেলায় কাটিমন আমের বাগান রয়েছে। উদ্যমী কৃষি উদ্যোক্তা সোহেল রানার বাগানে হেমন্তেও গাছভর্তি আম দেখা যায়। কুচকুরিলার গ্রামে নাসির উদ্দীনের দুই একরের ৯০০ গাছের বাগান এই মৌসুমে প্রায় ১০ লাখ টাকার আম উৎপাদন করেছে। এছাড়া কলম বিক্রির আয় হয়েছে প্রায় ৮০ হাজার টাকা। বাগান ২০১৯ সালে সৃজিত হলেও ২০২২ সাল থেকে পূর্ণমাত্রায় ফলন শুরু হয়।
নাসির উদ্দীন জানান, অমৌসুমি কাটিমন আম অন্য ফসলের তুলনায় অধিক লাভজনক। তবে বাজারে অপরিপক্ব আম বিক্রি করলে ভোক্তা ক্ষতিগ্রস্ত হয় এবং আমের দুর্নামও বাড়ে। সঠিক সময়ে আম সংগ্রহ করলে স্বাদও দারুণ হয়।
তিনি আরও উল্লেখ করেন, যারা কাটিমন আম চাষে আগ্রহী, তাদের অবশ্যই সঠিক চাষপদ্ধতি জানা প্রয়োজন। নৈতিক ও দক্ষ চাষ ছাড়া শুধু ক্ষতি নয়, বিভ্রান্তিও তৈরি হয়। এভাবে কাটিমন আম দেশের জন্য নতুন সম্ভাবনা ও চাষিদের জন্য আয় উৎস হিসেবে দারুণ সম্ভাবনা নিয়ে এসেছে।
